বিশ্বের অন্যতম সেরা খাবার হিসেবে বাদামকে এখন সুপারফুড বলা হয়। কয়েক বছর আগে যুক্তরাজ্যের একদল বিজ্ঞানী প্রায় ১,০০০ পুষ্টিকর খাবারের ওপর গবেষণা চালান। সেখান থেকে সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর ১০০টি খাবারের তালিকা তৈরি করা হয়, এবং বাদাম সেই তালিকায় শীর্ষস্থান দখল করে। বিশেষ করে আখরোট (Walnut) ও কাঠবাদাম (Almond) প্রথম স্থানে স্থান পায়।
বাদাম কেন এত গুরুত্বপূর্ণ খাবার ?
বাদামে রয়েছে একধরনের বিশেষ ফ্যাটি অ্যাসিড, যা শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় “ইঞ্জিন অয়েল” হিসেবে কাজ করে। যেমন একটি ইঞ্জিন নিয়মিত তেল পেলে সচল থাকে, তেমনি আমাদের শরীরের প্রায় ৭০ থেকে ১০০ ট্রিলিয়ন কোষের ভেতরে থাকা ছোট ছোট “ইঞ্জিন” (মাইটোকন্ড্রিয়া, লাইসোজোম ইত্যাদি) ঠিকভাবে কাজ করতে প্রয়োজন সঠিক ফ্যাটি অ্যাসিড। বাদামে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সেই জ্বালানি সরবরাহ করে, যা হরমোন, এনজাইম ও নানা উপকারী যৌগ তৈরি করতে সাহায্য করে।
মস্তিষ্কের খাবার
বাদামে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড মস্তিষ্কের সেরিব্রাল কর্টেক্স গঠনের মূল উপাদান। নিয়মিত বাদাম খেলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ে এবং স্মৃতিশক্তি উন্নত হয়। এছাড়া ওমেগা-৩ পুরুষদের প্রজনন স্বাস্থ্যে, চোখের রেটিনার সুরক্ষায় এবং হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও স্ট্রোক প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
কোএনজাইম কিউ-১০ (CoQ10)
বাদামে রয়েছে কোএনজাইম কিউ-১০ নামের এক শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা হৃদপিণ্ড, মস্তিষ্ক ও পেশির কার্যক্ষমতা বজায় রাখে এবং শরীরকে খাবার থেকে শক্তি উৎপাদনে সাহায্য করে।
অ্যামিনো অ্যাসিড
বাদামে থাকা গুরুত্বপূর্ণ অ্যামিনো অ্যাসিড এল-আর্জিনিন (L-Arginine) রক্তনালির স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায়, রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করে এবং রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখে, যা হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক।
ভিটামিন ও খনিজ উপাদান
বাদাম হলো বি কমপ্লেক্স ভিটামিন এবং ভিটামিন ই-এর ভালো উৎস, যা মস্তিষ্কের বিকাশ, ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী। পাশাপাশি এতে রয়েছে আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, জিঙ্ক, কপার ও সেলেনিয়াম– যেগুলো শরীরের নিয়মিত কার্যপ্রবাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
দীর্ঘায়ুর রহস্য
বিশ্বের দীর্ঘায়ু মানুষের অঞ্চলগুলো, যেমন জাপানের ওকিনাওয়া, গ্রিসের ইকারিয়া, ইতালির সার্ডিনিয়া, কোস্টারিকার নিকোয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের লোমা লিন্ডা; এখানকার মানুষ শত বছর বয়সেও সক্রিয় থাকেন। গবেষণায় দেখা গেছে, তাদের খাদ্যাভ্যাসের অন্যতম সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় বাদামের উপস্থিতি।
কতটুকু ও কীভাবে খাবেন
প্রতিদিন অল্প পরিমাণ বাদামই যথেষ্ট। উদাহরণস্বরূপ: ৫টি কাঠবাদাম, ২টি আখরোট, ৪টি কাজু, ৪টি পেস্তা ও ১০–১৫টি চিনাবাদাম।
লবণাক্ত বা ভাজা বাদামের পরিবর্তে কাঁচা বা প্রাকৃতিক বাদাম খাওয়া ভালো, কারণ অতিরিক্ত তাপ ও লবণ পুষ্টিগুণ কমিয়ে দেয়। সবচেয়ে ভালো উপায় হলো রাতে বাদাম পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে ধুয়ে ২–৩টি খেজুরের সঙ্গে খাওয়া। এটি হবে আপনার দিনের স্বাস্থ্যকর শুরু।
সক্রিয়, দীর্ঘ ও সুস্থ জীবন চাইলে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় বাদাম রাখুন। এর পুষ্টিগুণ শুধু মস্তিষ্ক ও হৃদপিণ্ড নয়, বরং শরীরের সার্বিক কার্যক্ষমতা ও দীর্ঘায়ু রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।





