পারকিনসনস রোগ হলো একটি দীর্ঘস্থায়ী স্নায়ুবিক রোগ যা মূলত শরীরের মোটর সিস্টেমকে প্রভাবিত করে। এই রোগে আক্রান্ত হলে চলাফেরা, ভারসাম্য এবং হাত-পায়ের নড়াচড়া অসুবিধাজনক হয়ে যায়। সাধারণত বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে এই রোগের ঝুঁকি বাড়ে, তবে কিছু ক্ষেত্রে তরুণ বয়সেও দেখা যেতে পারে।
পারকিনসনস ডিজিজ কী
পারকিনসনস ডিজিজে মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট স্নায়ু কোষ ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, বিশেষ করে ডোপামিন উৎপাদনকারী কোষ। ডোপামিন হলো একটি রাসায়নিক পদার্থ যা মস্তিষ্ককে মুভমেন্ট ও সমন্বয় নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। ডোপামিনের অভাব হলে হাত-পা কাঁপা, চলাফেরা ধীর হয়ে যাওয়া এবং ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়।
পারকিনসনস ডিজিজের কারণ
- বয়স বৃদ্ধি
- জেনেটিক কারণ, পরিবারের মধ্যে পূর্বে পারকিনসনসের ইতিহাস থাকলে ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়
- পরিবেশগত কারণ, দীর্ঘমেয়াদী রাসায়নিক বা বিষাক্ত পদার্থের সংস্পর্শ
- স্নায়ুবিক পরিবর্তন, মস্তিষ্কের স্নায়ু কোষে ক্ষতি ও ডোপামিন হ্রাস
লক্ষণ
পারকিনসনস ডিজিজের কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো
- হাত, পা বা ঠোঁট কাঁপা
- ধীর নড়াচড়া
- শরীরের শক্তভাব বা কড়াভাব
- ভারসাম্যহীনতা ও চলাফেরায় অসুবিধা
- হাতের লিখা ছোট বা অস্পষ্ট হয়ে যাওয়া
- মুখমন্ডলে কম অভিব্যক্তি
- শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তি
চিকিৎসা ও প্রতিকার
পারকিনসনস ডিজিজের সম্পূর্ণ নিরাময় এখনো সম্ভব নয়। তবে সঠিক চিকিৎসা ও জীবনযাপনের পরিবর্তনের মাধ্যমে রোগের গতি ধীর করা এবং জীবনমান উন্নত করা যায়
- ঔষধ ডোপামিন বা অন্যান্য নিউরোট্রান্সমিটারকে নিয়ন্ত্রণ করে প্রদাহ ও কাঁপা কমাতে সাহায্য করে
- ফিজিওথেরাপি হালকা ব্যায়াম ও হাঁটা ভারসাম্য ও মুভমেন্ট উন্নত করে
- অকুপেশনাল থেরাপি দৈনন্দিন কাজ সহজে করতে সাহায্য করে
- ডায়েট ও পুষ্টি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার, ফল, সবজি ও ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড গ্রহণ সহায়তা করে
- মস্তিষ্কের ডিপ স্টিমুলেশন গুরুতর ক্ষেত্রে সার্জারির মাধ্যমে নির্দিষ্ট স্নায়ুকে স্টিমুলেট করা হয়
প্রতিরোধের উপায়
- নিয়মিত ব্যায়াম ও হাঁটা
- পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম
- মানসিক চাপ কমানো ও ধ্যান
- স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
- মস্তিষ্ক সক্রিয় রাখার জন্য নতুন কিছু শেখা, বই পড়া বা পাজল খেলা
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা
পারকিনসনস ডিজিজে মস্তিষ্কের substantia nigra অংশে ডোপামিন উৎপাদনকারী স্নায়ু কোষ ধ্বংস হয়। ডোপামিনের অভাবে স্নায়ু সংকেত ঠিকভাবে যায় না, ফলে হাত-পা কাঁপা, চলাফেরা ধীর হওয়া ও ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়। এই রোগ ধীরে ধীরে বাড়তে পারে এবং জীবনযাত্রায় সীমাবদ্ধতা সৃষ্টি করতে পারে। তবে সঠিক চিকিৎসা ও থেরাপির মাধ্যমে রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
পারকিনসনস ডিজিজ একটি জটিল ও দীর্ঘস্থায়ী রোগ। প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা, ফিজিওথেরাপি এবং সঠিক জীবনযাপন রোগের গতি ধীর করতে এবং জীবনমান উন্নত করতে সাহায্য করে। সচেতনতা, স্বাস্থ্যকর অভ্যাস ও নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ রোগের নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।




