অনিদ্রা দূর করতে পারে এই ৫টি খাবার

অনিদ্রা দূর করতে পারে এই ৫টি খাবার

অনেকেই যে সমস্যাটির কথা প্রায়ই বলেন, তা হলো ‘ঘুমের সমস্যা’। হয়তো ঘুম আসতে দেরি হয়, অথবা মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলে আর ঘুম আসতে চায় না। একে বলা হয় অনিদ্রা বা ইনসমনিয়া (Insomnia)।

এর পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে: কাজের চাপ, হরমোনের পরিবর্তন (বিশেষ করে মহিলাদের মেনোপজের সময়), উদ্বেগ এবং জীবনযাত্রার অনিয়ম। ঘুম ঠিকমতো না হলে তা আমাদের সারাদিনের কাজে ব্যাঘাত ঘটায়, মেজাজ খিটখিটে করে, ওজন বাড়িয়ে দেয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। ঘুমের ওষুধের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে, প্রাকৃতিক উপায়ে ঘুমের মান উন্নত করা সম্ভব। আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এমন কিছু খাবার আছে, যা মস্তিষ্ককে শান্ত করে গভীর ঘুম আনতে সাহায্য করে।

ঘুমের পেছনে বিজ্ঞান:

মেলাটোনিন ও ম্যাগনেশিয়াম ভালো ঘুমের জন্য আমাদের শরীরে দুটি উপাদান খুব জরুরি।

১. মেলাটোনিন: এটি ‘ঘুমের হরমোন’ নামে পরিচিত। মস্তিষ্ক যখন এটি নিঃসরণ করে, তখন আমাদের ঘুম পায়।

২. ম্যাগনেশিয়াম: এটি একটি খনিজ যা স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত করে এবং পেশিকে শিথিল (Relax) করতে সাহায্য করে।

চলুন দেখে নিই কোন খাবারগুলো এই উপাদানগুলো সরবরাহ করে।

গভীর ঘুমের জন্য ৫টি কার্যকরী খাবার:

১. কাঠবাদাম (Almonds):

  • কেন খাবেন: কাঠবাদামকে ঘুমের জন্য অন্যতম সেরা খাবার বলা হয়। এতে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেশিয়াম রয়েছে, যা পেশির ক্লান্তি দূর করে এবং স্নায়ুকে শান্ত করে। এটি কর্টিসল (স্ট্রেস হরমোন) কমাতেও সাহায্য করে। এছাড়া কাঠবাদামে মেলাটোনিনও পাওয়া যায়, যা সরাসরি ঘুম চক্র নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
  • কখন খাবেন: ঘুমানোর এক ঘণ্টা আগে এক মুঠো (৭-৮টি) কাঠবাদাম খান।

২. কলা (Banana):

  • কেন খাবেন: কলা শুধু একটি সহজলভ্য ফল নয়, এটি ঘুমের জন্যও দারুণ উপকারী। কলায় রয়েছে ম্যাগনেশিয়াম এবং পটাশিয়াম। এই দুটি খনিজ একত্রে ‘ন্যাচারাল মাসল রিলাক্সেন্ট’ বা প্রাকৃতিক পেশি শিথিলকারী হিসেবে কাজ করে। সারা দিনের ক্লান্তি দূর করে শরীরকে ঘুমের জন্য প্রস্তুত করতে কলার জুড়ি নেই।
  • কখন খাবেন: রাতের খাবারের পর বা ঘুমানোর আগে একটি ছোট কলা খেতে পারেন।

৩. গরম দুধ (Warm Milk):

  • কেন খাবেন: ছোটবেলা থেকে ঘুম পাড়ানোর জন্য গরম দুধ খাওয়ানোর যে প্রচলন, তার পেছনে বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে। দুধে থাকে ‘ট্রিপটোফ্যান’ নামক একটি অ্যামিনো অ্যাসিড। এই ট্রিপটোফ্যান শরীরে গিয়ে সেরোটোনিন (মুড ভালো রাখে) এবং মেলাটোনিন (ঘুম আনে) তৈরিতে সাহায্য করে। গরম দুধ পান করার প্রক্রিয়াটি মানসিকভাবেও প্রশান্তিদায়ক।
  • কখন খাবেন: ঘুমানোর আধা ঘণ্টা আগে এক গ্লাস হালকা গরম দুধ (প্রয়োজনে চিনি ছাড়া) পান করুন।

৪. চর্বিযুক্ত মাছ (Fatty Fish):

  • কেন খাবেন: সপ্তাহে কয়েক দিন রাতের খাবারে চর্বিযুক্ত মাছ (যেমন- ইলিশ, স্যামন, টুনা, সার্ডিন) রাখা ঘুমের জন্য খুবই উপকারী। এই মাছগুলোতে থাকে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ভিটামিন ডি। এই দুটি উপাদান সেরোটোনিন উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সেরোটোনিন পরবর্তীতে মেলাটোনিনে রূপান্তরিত হয়ে ঘুমের মান উন্নত করে।
  • কখন খাবেন: রাতের প্রধান খাবারে রাখুন।

৫. ওটস (Oats):

  • কেন খাবেন: ওটস শুধু সকালের নাস্তা নয়, রাতের জন্যও ভালো। ওটসেও মেলাটোনিন এবং ট্রিপটোফ্যান পাওয়া যায়। এটি একটি জটিল শর্করা যা ধীরে ধীরে শক্তি ছাড়ে এবং রাতে ক্ষুধা লাগার প্রবণতা কমায়।
  • কখন খাবেন: রাতে হালকা খাবার হিসেবে অল্প ওটস দুধ দিয়ে রান্না করে খেতে পারেন।

ঘুমের জন্য যা এড়িয়ে চলবেন:

ঘুমানোর আগে কফি বা চা (ক্যাফেইন), অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার, ভাজা-পোড়া বা খুব ঝাল-মশলাদার খাবার এড়িয়ে চলুন।

ভালো ঘুম একটি সুস্থ জীবনের চাবিকাঠি। আপনার শোবার ঘরের পরিবেশ শান্ত রাখার পাশাপাশি, খাদ্য তালিকায় এই ছোট ছোট পরিবর্তনগুলো যোগ করুন। এই প্রাকৃতিক খাবারগুলো আপনার অনিদ্রার সমস্যা দূর করে আপনাকে একটি প্রশান্তিদায়ক ও গভীর ঘুম উপহার দিতে পারে।

    Scroll to Top