স্মৃতিশক্তি বাড়াতে পাজল, নতুন শখ এবং সেরা ৩টি খাবার

স্মৃতিশক্তি বাড়াতে পাজল নতুন শখ এবং সেরা ৩টি খাবার 1

আমরা প্রায়ই আমাদের শরীরের যত্ন নিই জিমে যাই, ভালো খাবার খাই। কিন্তু আমাদের শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, মস্তিষ্ক বা ব্রেনের যত্নের কথা ভুলে যাই। মস্তিষ্কেরও ব্যায়াম প্রয়োজন। বয়স চল্লিশ পার হওয়ার পর অনেকেই খেয়াল করেন যে ছোটখাটো জিনিস মনে থাকছে না, নতুন কিছু শিখতে বেশি সময় লাগছে বা মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হচ্ছে।

এর কারণ হলো, মস্তিষ্ককে যদি নিয়মিত চ্যালেঞ্জ না করা হয়, তবে এর কার্যক্ষমতা কমতে শুরু করে। এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় ‘কগনিটিভ ডিক্লাইন’ (Cognitive Decline) । সুখবর হলো, “Use it or lose it” (ব্যবহার করুন অথবা হারান) নীতিটি মস্তিষ্কের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রযোজ্য। সঠিক মানসিক ব্যায়াম এবং পুষ্টির মাধ্যমে মস্তিষ্ককে সচল, তীক্ষ্ণ এবং তরুণ রাখা সম্ভব।

১. মানসিক ব্যায়াম: পাজল এবং গেম মস্তিষ্ককে সচল রাখার সেরা উপায় হলো একে দিয়ে এমন কাজ করানো যা সে আগে করেনি বা যা করতে তাকে একটু ভাবতে হয়।

  • কেন জরুরি: আপনি যখন কোনো পাজল (Puzzle) বা ধাঁধার সমাধান করেন, তখন মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ একসাথে সমন্বয় করে কাজ করে। এটি মস্তিষ্কের কোষগুলোর মধ্যে নতুন নতুন সংযোগ (নিউরাল পাথওয়ে) তৈরি করে। এই সংযোগ যত শক্তিশালী হয়, স্মৃতিশক্তি এবং সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা তত বাড়ে।
  • কী ধরনের পাজল বা গেম খেলবেন:
    • শব্দজব্দ (Crosswords): এটি আপনার শব্দভাণ্ডার এবং স্মৃতিশক্তিকে চ্যালেঞ্জ করে।
    • সুডোকু (Sudoku): এটি লজিক (যুক্তি) এবং প্যাটার্ন চেনার ক্ষমতা বাড়ায়।
    • দাবা (Chess): এটি পরিকল্পনা, কৌশল এবং মনোযোগের জন্য সেরা ব্যায়াম।
    • জিগস পাজল (Jigsaw Puzzles): এটি ভিজ্যুয়াল বা স্থানিক স্মৃতিশক্তি উন্নত করে।

২. নতুন শখ (Learning a New Skill): শুধু পাজল নয়, নতুন কিছু শেখা মস্তিষ্কের জন্য আরও বেশি কার্যকরী।

  • কেন জরুরি: প্রতিদিন একই রুটিনের কাজ করতে করতে মস্তিষ্ক অভ্যস্ত হয়ে যায় এবং নতুন করে শেখে না। যখন আপনি সম্পূর্ণ নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করেন (যেমন একটি নতুন ভাষা, বাদ্যযন্ত্র বা এমনকি নতুন রান্নার রেসিপি), তখন মস্তিষ্ককে নতুন করে সংযোগ তৈরি করতে হয়। এই প্রক্রিয়াটিকে ‘নিউরোপ্লাস্টিসিটি’ (Neuroplasticity) বলে, যা মস্তিষ্কের বার্ধক্য রোধ করে।
  • কী ধরনের শখ বেছে নিতে পারেন:
    • নতুন ভাষা শেখা: এটি মস্তিষ্কের স্মৃতি ও বিশ্লেষণ কেন্দ্রকে সক্রিয় করে।
    • বাদ্যযন্ত্র বাজানো শেখা: পিয়ানো, গিটার বা বাঁশি শেখা এতে হাত, চোখ এবং শোনার ক্ষমতার মধ্যে দারুণ সমন্বয় প্রয়োজন হয়, যা মস্তিষ্কের জন্য একটি জটিল ব্যায়াম।
    • নতুন ধরনের নাচ বা ব্যায়াম শেখা: এটি শারীরিক ও মানসিক সমন্বয় বাড়ায়।

৩. মস্তিষ্ককে সচল রাখার সেরা খাবার: মস্তিষ্ক শরীরের মোট শক্তির প্রায় ২০% ব্যবহার করে। তাই এর সঠিক জ্বালানি প্রয়োজন।

  • ১. চর্বিযুক্ত মাছ (Fatty Fish):
    • কেন খাবেন: মস্তিষ্কের প্রায় ৬০% ফ্যাট বা চর্বি দিয়ে তৈরি, যার বড় অংশ হলো ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড (বিশেষ করে DHA) । ওমেগা-৩ মস্তিষ্কের কোষের পর্দা (Membrane) তৈরি করে এবং প্রদাহ কমায়।
    • উৎস: ইলিশ, স্যামন, সার্ডিন, টুনা মাছ। সপ্তাহে অন্তত দুই দিন এই মাছগুলো খেলে স্মৃতিশক্তি উন্নত হয় এবং ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কমে।
  • ২. বাদাম ও বীজ (Nuts and Seeds):
    • কেন খাবেন: আখরোট (Walnuts) দেখতে মস্তিষ্কের মতো এবং এটি মস্তিষ্কের জন্য দারুণ। এতে আছে ওমেগা-৩ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। কাঠবাদামে (Almonds) থাকা ভিটামিন ই মস্তিষ্কের কোষগুলোকে ক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করে। কুমড়োর বীজে থাকা জিঙ্ক (Zinc) স্নায়ুর সংকেত আদান-প্রদানে সাহায্য করে।
  • ৩. হলুদ এবং বেরি জাতীয় ফল (Turmeric and Berries):
    • কেন খাবেন: হলুদে থাকা ‘কারকিউমিন’ একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা মস্তিষ্কের প্রদাহ কমায় এবং নতুন ব্রেন সেল তৈরিতে সাহায্য করতে পারে। বেরি বা জাম জাতীয় ফলে থাকা ‘অ্যান্থোসায়ানিন’ মস্তিষ্কের কোষগুলোর মধ্যে যোগাযোগ উন্নত করে। 

আপনার মস্তিষ্ক একটি বাগানের মতো। একে নিয়মিত পরিচর্যা করতে হয়। প্রতিদিন কিছু সময় পাজল খেলে, নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করে এবং খাদ্যতালিকায় মাছ, বাদাম ও রঙিন ফল যোগ করে আপনি আপনার মস্তিষ্ককে সচল রাখতে পারেন। এই অভ্যাসগুলোই চল্লিশের পর আপনার স্মৃতিশক্তিকে প্রখর রাখবে এবং বার্ধক্যেও আপনাকে মানসিকভাবে তরুণ রাখবে।

    Scroll to Top