PCOD বা Polycystic Ovarian Disease হলো নারীদের মধ্যে অন্যতম সাধারণ হরমোনজনিত সমস্যা যা প্রজনন বয়সে অনেককেই প্রভাবিত করে। এই অবস্থায় ডিম্বাশয়ে ছোট ছোট সিস্ট তৈরি হয় যা হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়। ফলস্বরূপ মাসিক অনিয়ম, ওজন বৃদ্ধি, ব্রণ, অতিরিক্ত লোম গজানো এবং গর্ভধারণে জটিলতা দেখা দিতে পারে। তবে সঠিক জীবনযাপন, খাদ্যাভ্যাস ও চিকিৎসার মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
PCOD কীভাবে হয়
PCOD মূলত হরমোন ভারসাম্যের ঘাটতির কারণে হয়। শরীরে এন্ড্রোজেন নামক পুরুষ হরমোন অতিরিক্ত মাত্রায় উৎপন্ন হলে ডিম্বাণুর স্বাভাবিক পরিপক্বতা বাধাগ্রস্ত হয়। এর ফলে ডিম্বাশয়ে সিস্ট তৈরি হয় এবং মাসিক চক্র অনিয়মিত হয়ে যায়।
PCOD এর সাধারণ লক্ষণ
- মাসিক অনিয়ম বা দীর্ঘ সময় পরপর মাসিক হওয়া
- ওজন বৃদ্ধি বা হঠাৎ মোটা হয়ে যাওয়া
- ত্বকে ব্রণ, তৈলাক্ত ভাব ও চুল পড়া
- মুখে বা শরীরে অস্বাভাবিক লোম গজানো
- ক্লান্তি, মেজাজ পরিবর্তন বা ঘুমের সমস্যা
- গর্ভধারণে অসুবিধা
PCOD এর কারণ
- হরমোনের ভারসাম্যহীনতা
- অতিরিক্ত ইনসুলিন উৎপাদন
- জেনেটিক বা পারিবারিক প্রভাব
- মানসিক চাপ ও অনিয়মিত জীবনযাপন
- অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা
PCOD এর জটিলতা
অবহেলা করলে PCOD থেকে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল বৃদ্ধি, গর্ভধারণ জটিলতা এমনকি এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়তে পারে।
PCOD নিয়ন্ত্রণে যা করবেন
সুষম খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখুন
প্রচুর শাকসবজি, ফল, প্রোটিন ও সম্পূর্ণ শস্য খাবার খান এবং প্রক্রিয়াজাত ও মিষ্টি খাবার পরিহার করুন।
নিয়মিত ব্যায়াম করুন
হাঁটা, যোগব্যায়াম ও হালকা কার্ডিও এক্সারসাইজ ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
মানসিক প্রশান্তি বজায় রাখুন
ধ্যান, পর্যাপ্ত ঘুম ও মানসিক চাপ কমানো হরমোনের ভারসাম্য পুনরুদ্ধারে সহায়ক।
চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
PCOD নির্ণয়ে রক্ত পরীক্ষা ও আল্ট্রাসনোগ্রাম প্রয়োজন হতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হরমোন নিয়ন্ত্রণকারী ওষুধ বা জীবনধারায় পরিবর্তন আনতে হবে।
প্রাকৃতিকভাবে সহায়ক খাবার
- তুলসী ও মেথি হরমোন ভারসাম্য রক্ষায় সহায়তা করে
- দারচিনি ইনসুলিন সেনসিটিভিটি উন্নত করে
- লেবু ও সবুজ শাকসবজি শরীর ডিটক্সে সাহায্য করে
PCOD ভয় পাওয়ার মতো নয়, এটি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণযোগ্য একটি অবস্থা। নিয়মিত ব্যায়াম, সুষম খাদ্য, মানসিক শান্তি এবং চিকিৎসকের পরামর্শে জীবনযাপনই পারে শরীরের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে। সচেতনতা ও ধারাবাহিক যত্নই হতে পারে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনের প্রথম ধাপ।
