পেশি ও ওজন নিয়ন্ত্রণে চর্বিহীন প্রোটিন: কেন এবং কীভাবে খাবেন?

পেশি ও ওজন নিয়ন্ত্রণে চর্বিহীন প্রোটিন কেন এবং কীভাবে খাবেন 1

চর্বিহীন প্রোটিন বা আমিষকে আমাদের শরীরের ‘বিল্ডিং ব্লক’ বা গাঠনিক উপাদান বলা হয়। ত্বক, চুল, হাড় থেকে শুরু করে শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, সবকিছু তৈরিতেই প্রোটিন অপরিহার্য।

বয়স চল্লিশ পার হওয়ার পর এই প্রোটিনের গুরুত্ব বহুগুণ বেড়ে যায়। কারণ এই সময় থেকে শরীরে স্বাভাবিকভাবেই দুটি বড় পরিবর্তন আসে:

  1. মেটাবলিজম বা হজমশক্তি ধীর হয়ে যায়, ফলে ওজন বাড়তে শুরু করে।
  2. ‘সারকোপেনিয়া’ বা পেশির ক্ষয় শুরু হয়, যার ফলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে।

এই দুই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য সবচেয়ে কার্যকরী হাতিয়ার হলো সঠিক প্রোটিন নির্বাচন করা, বিশেষ করে চর্বিহীন বা ‘লিন’ প্রোটিন (Lean Protein)।

কেন চল্লিশের পর প্রোটিন এত জরুরি?

১. পেশির ক্ষয় রোধ করতে (সারকোপেনিয়া): চল্লিশের পর প্রতি দশকে আমাদের শরীর প্রায় ৩% থেকে ৮% পেশি হারাতে থাকে। এই পেশি কমে যাওয়াই বার্ধক্যের প্রধান লক্ষণ। পেশি কমে গেলে শরীর দুর্বল হয়, হাড়ের ওপর চাপ বাড়ে এবং সামান্য আঘাতেই ফ্র্যাকচারের ঝুঁকি তৈরি হয়। প্রোটিন হলো এই পেশির প্রধান খাদ্য ও মেরামতকারী। পর্যাপ্ত প্রোটিন গ্রহণ করলে তা এই পেশির ক্ষয় রোধ করে, শরীরকে ভেতর থেকে শক্তিশালী ও কর্মক্ষম রাখে। আপনি যদি হালকা ব্যায়াম করেন, তবে এই প্রোটিন নতুন পেশি গঠনেও সাহায্য করে।

২. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে: প্রোটিনের দুটি বিশেষত্ব রয়েছে যা ওজন নিয়ন্ত্রণে ম্যাজিকের মতো কাজ করে:

  • দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখে: শর্করা বা ফ্যাটের তুলনায় প্রোটিন হজম হতে বেশি সময় নেয়। ফলে একবার প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খেলে দীর্ঘ সময় পেট ভরা থাকে, বার বার ক্ষুধা লাগে না। এতে অহেতুক স্ন্যাকিং বা অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমে যায় এবং ক্যালোরি গ্রহণ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
  • মেটাবলিজম বাড়ায়: প্রোটিন হজম করতে শরীরকে বেশি ক্যালোরি পোড়াতে হয় (যাকে ‘থার্মিক এফেক্ট অফ ফুড’ বলে)। অর্থাৎ, প্রোটিন খাওয়ার মাধ্যমেও আপনি ক্যালোরি বার্ন করছেন। এটি চল্লিশের ধীর মেটাবলিজমকে সচল রাখতে সাহায্য করে।

চর্বিহীন প্রোটিন” (Lean Protein) কী এবং কেন?

প্রোটিন মানেই শুধু মাংস নয়। প্রোটিন সব উৎসই এক নয়। যেমন, রেড মিট (খাসি বা গরুর মাংস) প্রোটিনের ভালো উৎস হলেও এতে প্রচুর স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা ক্ষতিকর চর্বি থাকে, যা হৃদরোগ ও কোলেস্টেরলের ঝুঁকি বাড়ায়।

“চর্বিহীন প্রোটিন” হলো সেই সব প্রোটিন যাতে ক্যালোরির তুলনায় প্রোটিনের পরিমাণ বেশি এবং ক্ষতিকর চর্বির পরিমাণ খুব কম থাকে। চল্লিশের পর হার্টকে সুস্থ রাখতে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে এই প্রোটিনগুলোই বেছে নেওয়া উচিত।

চর্বিহীন প্রোটিনের সেরা উৎস:

১. মাছ: মাছ হলো প্রোটিনের অন্যতম সেরা উৎস। সাদা মাছ (যেমন: রুই, কাতলা, পাঙ্গাস, কোরাল, তেলাপিয়া) চর্বিহীন প্রোটিনে ভরপুর। অন্যদিকে, তৈলাক্ত মাছ (যেমন: ইলিশ, স্যামন, সার্ডিন) প্রোটিনের পাশাপাশি ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সরবরাহ করে, যা হার্ট ও মস্তিষ্কের জন্য উপকারী।

২. মুরগির মাংস: বিশেষ করে মুরগির বুকের মাংস (ব্রেস্ট পিস) হলো উৎকৃষ্ট মানের লিন প্রোটিন। এতে ফ্যাট প্রায় থাকেই না।

৩. ডিম: ডিমকে ‘সম্পূর্ণ প্রোটিন’ বলা হয়। এতে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় সব অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে। কুসুম সহ একটি ডিম স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।

৪. ডাল ও বিনস: নিরামিষাশীদের জন্য প্রোটিনের সেরা উৎস হলো ডাল। মসুর, মুগ, ছোলার ডাল, রাজমা, ছোলা এগুলোতে প্রোটিনের পাশাপাশি প্রচুর ফাইবার থাকে, যা হজমশক্তি বাড়ায় এবং কোলেস্টেরল কমায়।

৫. দুগ্ধজাত খাবার (কম চর্বিযুক্ত): টক দই, ছানা বা পনির প্রোটিন ও ক্যালসিয়ামের চমৎকার উৎস। এগুলো হাড় মজবুত করে এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।

 সুস্থ থাকার মূলমন্ত্র হলো পেশি ধরে রাখা এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা। আর এই দুটির জন্যই প্রয়োজন সঠিক প্রোটিন। আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রেড মিট বা ভাজা-পোড়া প্রোটিনের বদলে মাছ, মুরগির মাংস, ডাল এবং টক দইয়ের মতো চর্বিহীন প্রোটিন যোগ করুন। চেষ্টা করুন প্রতিবেলার প্রধান খাবারে যেন প্রোটিনের একটি ভালো উৎস থাকে।

    Scroll to Top