৪০ বছর বা তার বেশি বয়সে হার্নিয়া প্রতিরোধ ও যত্নে করণীয়

৪০ বছর বা তার বেশি বয়সে হার্নিয়া প্রতিরোধ ও যত্নে করণীয়

হার্নিয়া সাধারণত পেশি দুর্বলতা, অতিরিক্ত চাপ বা ওজন বৃদ্ধির কারণে হয়ে থাকে। তবে সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার নিয়ম মেনে চললে এই ঝুঁকি অনেকটাই কমানো যায়। পুষ্টিকর ও ভারসাম্যপূর্ণ খাবার শরীরের পেশিকে মজবুত করে, কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে যা হার্নিয়া প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

নিচে হার্নিয়া প্রতিরোধে উপকারী কিছু খাবার, অভ্যাস ও যত্নের দিক তুলে ধরা হলো:

. আঁশযুক্ত খাবার খান

কোষ্ঠকাঠিন্য হার্নিয়ার অন্যতম কারণ, কারণ মলত্যাগের সময় অতিরিক্ত চাপ পেটে চাপ সৃষ্টি করে। আঁশ বা ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার হজম প্রক্রিয়া সচল রাখে এবং এই চাপ কমায়।

যা খাবেন:

  • গোটা দানার খাদ্য যেমন ওটস, ব্রাউন রাইস, গমের রুটি
  • ফল যেমন আপেল, পেয়ারা, কলা, পেঁপে, নাশপাতি
  • সবজি যেমন পালং শাক, গাজর, শিম, ব্রকলি
  • ডাল, ছোলা ও মসুর

. পর্যাপ্ত পানি পান করুন

শরীরে পানির অভাব কোষ্ঠকাঠিন্যের ঝুঁকি বাড়ায়। পর্যাপ্ত পানি পান করলে মল নরম থাকে এবং পেটে চাপ কমে।

পরামর্শ:

  • প্রতিদিন অন্তত ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করুন
  • সকালে খালি পেটে এক গ্লাস গরম পানি পান করুন
  • ডাবের পানি, স্যুপ বা হারবাল চা পান করুন
  • সফট ড্রিংক বা চিনি-যুক্ত পানীয় কমান

. প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খান

প্রোটিন শরীরের পেশি ও টিস্যু মেরামত করে এবং পেটের দেয়ালকে মজবুত রাখে।

যা খাবেন:

  • মাছ, ডিম, মুরগির মাংস
  • টফু, ডাল, দই
  • গরু বা খাসির চর্বি-মুক্ত মাংস সীমিত পরিমাণে

. ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খান

ভিটামিন সি শরীরে কোলাজেন তৈরি করে, যা পেশি ও টিস্যুকে শক্ত রাখে।

যা খাবেন:

  • কমলা, লেবু, পেয়ারা, টমেটো, ক্যাপসিকাম, স্ট্রবেরি
  • কাঁচামরিচ ও ব্রকলিও ভালো উৎস

. ম্যাগনেসিয়াম জিঙ্কসমৃদ্ধ খাবার খান

এগুলো পেশির কার্যক্ষমতা বজায় রাখে এবং শরীরের কোষের গঠন মজবুত করে।

যা খাবেন:

  • বাদাম, বীজ, পালং শাক, অ্যাভোকাডো
  • গোটা দানার খাবার, মসুর ডাল, কাজুবাদাম
  • সামুদ্রিক মাছ ও ডিম

. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন

অতিরিক্ত ওজন পেটের ভেতরে চাপ সৃষ্টি করে, যা হার্নিয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।

করণীয়:

  • প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হালকা হাঁটা
  • ভারী খাবারের পরিবর্তে হালকা সুষম খাবার
  • চিনিযুক্ত ও তেলে ভাজা খাবার কমান
  • অতিরিক্ত খাবার একবারে না খেয়ে ভাগ করে খান

৭. অ্যাসিড রিফ্লাক্স বাড়ায় এমন খাবার এড়িয়ে চলুন

বিশেষ করে যারা Hiatal Hernia-এর ঝুঁকিতে আছেন, তাদের জন্য অ্যাসিড রিফ্লাক্সের খাবার ক্ষতিকর।

যা এড়িয়ে চলবেন:

  • ঝাল, ভাজা ও মশলাযুক্ত খাবার
  • টমেটো বা সাইট্রাস ফল
  • গ্যাসযুক্ত পানীয় ও কফি
  • খাওয়ার পরপরই শোয়া বা বেঁকে থাকা

. অল্প পরিমাণে বারবার খাবার খান

তিনবার ভারী খাবারের পরিবর্তে দিনে ৪ থেকে ৫ বার অল্প অল্প করে খাবেন। এতে হজম ভালো হবে এবং পেটে অতিরিক্ত চাপ পড়বে না।

হার্নিয়া প্রতিরোধে এমন জীবনযাপন গড়ে তুলুন যা পেশি ও টিস্যুকে শক্ত রাখে, কোষ্ঠকাঠিন্য কমায় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। নিয়মিত ব্যায়াম, সঠিক ভঙ্গি বজায় রাখা, পর্যাপ্ত পানি পান করা ও ভারী বস্তু না তোলার অভ্যাস গড়ে তুললে হার্নিয়ার ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব।

    Scroll to Top