চল্লিশ বছর বয়স পর্যন্ত শরীর অনেক ঘাটতি নিজে থেকেই পুষিয়ে নিতে পারে। কিন্তু চল্লিশের পর শরীরকে একটু বাড়তি যত্ন নিতে হয়। এই বয়সে শরীরে কিছু নির্দিষ্ট ভিটামিন ও মিনারেল বা খনিজ লবণের চাহিদা বেড়ে যায়, অথবা শরীর তা ঠিকমতো শোষণ করতে পারে না।
এর মধ্যে তিনটি উপাদান সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে: ভিটামিন বি১২, ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি। এই তিনটি উপাদানের ঘাটতি চল্লিশের পর নানা ধরনের জটিলতা তৈরি করে, ক্লান্তি ও দুর্বলতা থেকে শুরু করে হাড় ক্ষয় এবং স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার মতো মারাত্মক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
তাই এই বয়সে সুস্থ থাকতে হলে এই উপাদানগুলো কেন জরুরি এবং কোন খাবারে এগুলো পাওয়া যায় তা জানা অপরিহার্য।
১. ভিটামিন বি১২ (Vitamin B12): স্নায়ু ও শক্তির জন্য
- কেন প্রয়োজন: ভিটামিন বি১২ আমাদের স্নায়ুতন্ত্র (Nerve Function) এবং মস্তিষ্ককে সচল রাখে। এটি নতুন রক্তকণিকা তৈরিতে সাহায্য করে। চল্লিশের পর আমাদের পাকস্থলীতে অ্যাসিডের পরিমাণ কমে যেতে পারে, যার ফলে খাবার থেকে বি১২ শোষণের ক্ষমতা কমে যায়।
- ঘাটতির লক্ষণ: এর ঘাটতি হলে তীব্র ক্লান্তি, দুর্বলতা, হাত-পায়ে ঝিঁ ঝিঁ ধরা, স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া (Memory Fog) এবং বিষণ্ণতা দেখা দিতে পারে।
- কোথায় পাবেন: ভিটামিন বি১২ প্রধানত প্রাণিজ খাবারে পাওয়া যায়।
- সেরা উৎস: মাছ, মাংস (বিশেষ করে কলিজা), ডিম, দুধ, দই এবং পনির।
- নিরামিষাশীদের জন্য: যারা প্রাণিজ খাবার খান না, তাদের জন্য ফোর্টিফাইড সিরিয়াল (Fortified Cereals) বা ডাক্তারের পরামর্শে সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।
২. ক্যালসিয়াম (Calcium): হাড়ের সুরক্ষায়
- কেন প্রয়োজন: আমাদের হাড়ের মূল গাঠনিক উপাদান হলো ক্যালসিয়াম। চল্লিশের পর, বিশেষ করে মহিলাদের মেনোপজের সময়, ইস্ট্রোজেন হরমোন কমে যাওয়ায় হাড় থেকে ক্যালসিয়াম ক্ষয় (Bone Loss) হওয়ার প্রক্রিয়া খুব দ্রুত গতিতে এগোতে থাকে। একে অস্টিওপোরোসিস (Osteoporosis) বলে, যার ফলে হাড় ভঙ্গুর হয়ে যায় এবং সামান্য আঘাতেই ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
- ঘাটতির লক্ষণ: হাড় দুর্বল হয়ে যাওয়া, দাঁতের সমস্যা, পেশিতে খিল ধরা।
- কোথায় পাবেন:
- সেরা উৎস: দুধ, টক দই, ছানা, পনির।
- অন্যান্য উৎস: কাঁটা সহ ছোট মাছ (মলা, কাচকি), সবুজ শাক (পালং, সজনে পাতা, ব্রকলি), তিল, কাঠবাদাম এবং টফু।
৩. ভিটামিন ডি (Vitamin D): ক্যালসিয়ামের সহায়ক ও ইমিউনিটি বুস্টার
- কেন প্রয়োজন: ভিটামিন ডি-কে ‘সানশাইন ভিটামিন’ বলা হয়। এর গুরুত্ব অপরিসীম। আপনি যত ক্যালসিয়ামই খান না কেন, ভিটামিন ডি ছাড়া শরীর সেই ক্যালসিয়াম শোষণ করতে পারে না। অর্থাৎ, ভিটামিন ডি হলো সেই চাবি যা ক্যালসিয়ামের জন্য দরজা খুলে দেয়। এটি হাড় মজবুত করার পাশাপাশি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (Immunity) বাড়াতে এবং মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও সাহায্য করে।
- ঘাটতির লক্ষণ: হাড়ে ব্যথা, পেশির দুর্বলতা, ঘন ঘন অসুস্থ হওয়া এবং বিষণ্ণতা।
- কোথায় পাবেন:
- সেরা উৎস: সূর্যের আলো। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টার মধ্যে ১৫-২০ মিনিট হাত-পা বা পিঠে রোদ লাগালে শরীরের চাহিদার অনেকটাই পূরণ হয়।
- খাবার উৎস: চর্বিযুক্ত মাছ (ইলিশ, স্যামন, টুনা), ডিমের কুসুম, মাশরুম এবং ফোর্টিফাইড দুধ বা তেল।
প্রাণবন্ত ও কর্মক্ষম থাকার জন্য একটি সুষম খাদ্য তালিকার কোনো বিকল্প নেই। নিশ্চিত করুন আপনার প্রতিদিনের খাবারে যেন ভিটামিন বি১২, ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি-এর উৎসগুলো অন্তর্ভুক্ত থাকে। নিয়মিত সূর্যের আলো গায়ে লাগান। যদি ক্লান্তি বা হাড়ে ব্যথার মতো লক্ষণগুলো দেখা দেয়, তবে অবহেলা না করে ডাক্তারের পরামর্শে রক্ত পরীক্ষা করিয়ে এই ভিটামিনগুলোর মাত্রা জেনে নেওয়া এবং প্রয়োজনে সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা উচিত।





