আদা, রসুন ও বেরি দিয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ান

আদা, রসুন ও বেরি দিয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ান

চল্লিশ বছর বয়সের পর শরীর আগের মতো সবল থাকে না। ছোটখাটো ঠান্ডা-কাশি বা ফ্লু সহজে কাবু করে ফেলে। এর কারণ হলো, বয়সের সাথে সাথে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা বা ইমিউন সিস্টেম কিছুটা ধীরগতির হয়ে যায়। বিশেষ করে এই বয়সে ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপের মতো দীর্ঘমেয়াদী রোগ থাকলে, ইমিউনিটি আরও কমে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।

তবে, আমাদের রান্নাঘরেই এমন কিছু ‘সুপারফুড’ আছে, যা কোনো ওষুধের চেয়ে কম নয়। এদের মধ্যে আদা, রসুন এবং বেরি জাতীয় ফলগুলো শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ভেতর থেকে জাগিয়ে তুলতে পারে।

ইমিউন সিস্টেম কীভাবে কাজ করে?

সহজ ভাষায়, ইমিউন সিস্টেম হলো শরীরের নিজস্ব সেনাবাহিনী (যেমন শ্বেত রক্তকণিকা)। যখন বাইরে থেকে কোনো ক্ষতিকর ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণু আক্রমণ করে, তখন এই সেনাবাহিনী তার বিরুদ্ধে লড়াই করে শরীরকে রক্ষা করে। বয়স বাড়লে এই সেনাবাহিনীর শক্তি কিছুটা কমে যায়। আদা, রসুন বা বেরির মতো খাবারগুলো এই সেনাবাহিনীকে নতুন করে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।

১. রসুন (Garlic): জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক

  • মূল উপাদান: রসুনে ‘অ্যালিসিন’ নামক একটি শক্তিশালী যৌগ থাকে, যা এর ঝাঁঝালো গন্ধের জন্য দায়ী।
  • কীভাবে কাজ করে: অ্যালিসিন একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিফাঙ্গাল এবং অ্যান্টিভাইরাল হিসেবে কাজ করে। এটি শ্বেত রক্তকণিকার ক্ষমতা বাড়ায়, যেন তারা আরও কার্যকরভাবে জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়তে পারে।
  • উপকারিতা: গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত রসুন খান, তাদের ঠান্ডা-সর্দি লাগার প্রবণতা অন্যদের তুলনায় প্রায় ৬০% কম। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং রক্তনালী পরিষ্কার রাখতেও সাহায্য করে, যা চল্লিশের পর হার্টের জন্য খুবই জরুরি।
  • কীভাবে খাবেন: কাঁচা রসুন সবচেয়ে উপকারী। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক কোয়া কাঁচা রসুন চিবিয়ে বা থেঁতো করে পানির সাথে খেলে সেরা ফল পাওয়া যায়। রান্নায় ব্যবহার করলেও এর উপকারিতা মেলে, তবে অতিরিক্ত রান্না করলে অ্যালিসিন নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

২. আদা (Ginger): প্রদাহ কমানোর জাদুকর উপায়

  • মূল উপাদান: আদার মূল সক্রিয় উপাদান হলো ‘জিঞ্জেরল’।
  • কীভাবে কাজ করে: জিঞ্জেরল একটি অত্যন্ত শক্তিশালী অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি (প্রদাহরোধী) উপাদান। শরীরে যেকোনো ধরনের ইনফেকশন বা প্রদাহ হলে আদা তা কমাতে সাহায্য করে। এটি গলা ব্যথা, কাশি এবং শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ কমাতে দারুণ কার্যকর।
  • উপকারিতা: আদা হজমশক্তি বাড়ায় এবং বমি বমি ভাব দূর করে। চল্লিশের পর যাদের অ্যাসিডিটি বা হজমের সমস্যা হয়, তাদের জন্য আদা খুবই উপকারী। এটি শরীরের কোষগুলোকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করে।
  • কীভাবে খাবেন: আদা চা (লেবু ও মধু সহ) ইমিউনিটির জন্য সেরা পানীয়। এ ছাড়া তরকারিতে, সালাদে বা স্যুপে আদা কুচি ব্যবহার করা যেতে পারে।

৩. বেরি বা জাম (Berries): অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ভাণ্ডার

  • মূল উপাদান: বেরি জাতীয় ফল (যেমন কালো জাম, স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি) ‘অ্যান্থোসায়ানিন’ নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর।
  • কীভাবে কাজ করে: এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো শরীরের ফ্রি র‍্যাডিক্যাল ধ্বংস করে, যা আমাদের ইমিউন সেলগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে, যা শ্বেত রক্তকণিকা তৈরিতে সাহায্য করে।
  • উপকারিতা: বেরি জাতীয় ফল শুধু ইমিউনিটি নয়, মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য এবং ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতেও সাহায্য করে। এগুলো শরীরের সামগ্রিক প্রদাহ কমায়, যা অনেক দীর্ঘমেয়াদী রোগের মূল কারণ।
  • কীভাবে খাবেন: তাজা ফল হিসেবে, দইয়ের সাথে মিশিয়ে বা সালাদে খাওয়া যেতে পারে।

সুস্থ থাকার জন্য দামি সাপ্লিমেন্টের পেছনে ছোটার প্রয়োজন নেই। আপনার রান্নাঘরের এই সহজলভ্য উপাদানগুলোই হতে পারে আপনার বর্ম। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় সামান্য আদা, এক কোয়া রসুন এবং এক মুঠো মৌসুমী জাম বা বেরি রাখুন। এই ছোট অভ্যাসগুলোই আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে এতটা শক্তিশালী করে তুলবে যে ছোটখাটো অসুস্থতা আপনাকে সহজে কাবু করতে পারবে না।

Scroll to Top