ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সচেতনতা: প্রতিটি পরিবারের জানা প্রয়োজন

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সচেতনতা প্রতিটি পরিবারের জানা প্রয়োজন

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সচেতনতা: ডেঙ্গু একটি সংক্রামক ভাইরাসজনিত রোগ, যা মূলত Aedes মশা থেকে ছড়ায়। এটি সাধারণত গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে বেশি দেখা যায়। ডেঙ্গু দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং সময়মতো চিকিৎসা না নিলে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। এই রোগের প্রধান লক্ষণ হলো হঠাৎ জ্বর, মাথাব্যথা, চোখের পেছনের ব্যথা এবং ত্বকে দাগ।

ডেঙ্গু কী

ডেঙ্গু ভাইরাস মানুষের শরীরে মশার কামড়ের মাধ্যমে প্রবেশ করে। এই ভাইরাস রক্তে প্রবেশ করলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রতিক্রিয়া শুরু করে। ফলস্বরূপ জ্বর, শারীরিক দুর্বলতা, মাথাব্যথা ও হাড়-পেশিতে ব্যথা দেখা দেয়।

ডেঙ্গুর কারণ

  • Aedes aegypti ও Aedes albopictus মশা ডেঙ্গুর প্রধান বাহক।
  • মশার জন্মস্থান হলো জমে থাকা পানি, যেমন গামলা, টিউব, কন্টেইনার।
  • গ্রীষ্ম ও বর্ষার সময়ে মশার সংখ্যা বেশি হওয়ায় সংক্রমণের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
  • অপ্রতিরোধক পরিবেশ ও অপরিষ্কার পানি জমে থাকা।

ডেঙ্গুর সাধারণ লক্ষণ

ডেঙ্গুর লক্ষণ সাধারণত মশার কামড়ের ৪-১০ দিনের মধ্যে দেখা দেয়

  • হঠাৎ জ্বর
  • তীব্র মাথাব্যথা
  • চোখের পেছনের ব্যথা
  • হাড় ও পেশিতে ব্যথা
  • ত্বকে দাগ বা র‍্যাশ
  • বমি বা মলবমি
  • ক্লান্তি ও দুর্বলতা

গুরুতর লক্ষণ (ডেঙ্গু হেমোরাজিক ফিভার বা ডেঙ্গু শক সিনড্রোম)

  • খুব কম রক্তচাপ
  • রক্তপাত যেমন নাক বা মাড়ি থেকে
  • তীব্র বমি
  • ত্বকে খুব বেশি র‍্যাশ
  • মানসিক বিভ্রান্তি বা অচেতনতা

ডেঙ্গুর চিকিৎসা প্রতিকার

ডেঙ্গুর জন্য নির্দিষ্ট কোনো ওষুধ নেই। চিকিৎসা মূলত লক্ষণনির্ভর ও সহায়ক

  • পর্যাপ্ত পানি পান এবং হাইড্রেশন বজায় রাখা
  • বিশ্রাম নেওয়া
  • জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ গ্রহণ (অ্যাসপিরিন ও ইবুপ্রোফেন এড়িয়ে চলা)
  • চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে গুরুতর ক্ষেত্রে হাসপাতাল ভর্তি

ডেঙ্গুর প্রতিরোধের উপায়

  • জমে থাকা পানি ফেলে বা ঢেকে রাখুন
  • মশার ছত্রাক ও লার্ভা ধ্বংস করতে ন্যাপকিন বা রাসায়নিক ব্যবহার করুন
  • ঘর বা বাড়িতে মশারি  ব্যবহার করুন
  • বার্ষিক পরিচ্ছন্নতা অভিযান ও পরিবেশ সচেতনতা বজায় রাখুন

বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা

ডেঙ্গু ভাইরাস চারটি ধরণের (DEN-1, DEN-2, DEN-3, DEN-4) আছে। মশার কামড়ের মাধ্যমে ভাইরাস মানবদেহে প্রবেশ করে। প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করে, যার ফলে জ্বর, হাড়-পেশিতে ব্যথা ও ত্বকে র‍্যাশ দেখা দেয়। কিছু ক্ষেত্রে, দ্বিতীয়বার সংক্রমণে শরীরের প্রতিরক্ষা অত্যধিক প্রতিক্রিয়া দেখায়, যা হেমোরাজিক ফিভার বা শক সৃষ্টি করতে পারে।

ডেঙ্গু একটি দ্রুত ছড়ানো রোগ, তবে সতর্কতা, পরিচ্ছন্ন পরিবেশ এবং সময়মতো চিকিৎসা নিলে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। জমে থাকা পানি দূর করা, মশার উত্স ধ্বংস করা এবং স্বাস্থ্য সচেতনতা বজায় রাখা ডেঙ্গু প্রতিরোধের প্রধান হাতিয়ার।

    Scroll to Top