হার্নিয়া সাধারণত পেশি দুর্বলতা, অতিরিক্ত চাপ বা ওজন বৃদ্ধির কারণে হয়ে থাকে। তবে সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার নিয়ম মেনে চললে এই ঝুঁকি অনেকটাই কমানো যায়। পুষ্টিকর ও ভারসাম্যপূর্ণ খাবার শরীরের পেশিকে মজবুত করে, কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে যা হার্নিয়া প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
নিচে হার্নিয়া প্রতিরোধে উপকারী কিছু খাবার, অভ্যাস ও যত্নের দিক তুলে ধরা হলো:
১. আঁশযুক্ত খাবার খান
কোষ্ঠকাঠিন্য হার্নিয়ার অন্যতম কারণ, কারণ মলত্যাগের সময় অতিরিক্ত চাপ পেটে চাপ সৃষ্টি করে। আঁশ বা ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার হজম প্রক্রিয়া সচল রাখে এবং এই চাপ কমায়।
যা খাবেন:
- গোটা দানার খাদ্য যেমন ওটস, ব্রাউন রাইস, গমের রুটি
- ফল যেমন আপেল, পেয়ারা, কলা, পেঁপে, নাশপাতি
- সবজি যেমন পালং শাক, গাজর, শিম, ব্রকলি
- ডাল, ছোলা ও মসুর
২. পর্যাপ্ত পানি পান করুন
শরীরে পানির অভাব কোষ্ঠকাঠিন্যের ঝুঁকি বাড়ায়। পর্যাপ্ত পানি পান করলে মল নরম থাকে এবং পেটে চাপ কমে।
পরামর্শ:
- প্রতিদিন অন্তত ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করুন
- সকালে খালি পেটে এক গ্লাস গরম পানি পান করুন
- ডাবের পানি, স্যুপ বা হারবাল চা পান করুন
- সফট ড্রিংক বা চিনি-যুক্ত পানীয় কমান
৩. প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খান
প্রোটিন শরীরের পেশি ও টিস্যু মেরামত করে এবং পেটের দেয়ালকে মজবুত রাখে।
যা খাবেন:
- মাছ, ডিম, মুরগির মাংস
- টফু, ডাল, দই
- গরু বা খাসির চর্বি-মুক্ত মাংস সীমিত পরিমাণে
৪. ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খান
ভিটামিন সি শরীরে কোলাজেন তৈরি করে, যা পেশি ও টিস্যুকে শক্ত রাখে।
যা খাবেন:
- কমলা, লেবু, পেয়ারা, টমেটো, ক্যাপসিকাম, স্ট্রবেরি
- কাঁচামরিচ ও ব্রকলিও ভালো উৎস
৫. ম্যাগনেসিয়াম ও জিঙ্কসমৃদ্ধ খাবার খান
এগুলো পেশির কার্যক্ষমতা বজায় রাখে এবং শরীরের কোষের গঠন মজবুত করে।
যা খাবেন:
- বাদাম, বীজ, পালং শাক, অ্যাভোকাডো
- গোটা দানার খাবার, মসুর ডাল, কাজুবাদাম
- সামুদ্রিক মাছ ও ডিম
৬. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন
অতিরিক্ত ওজন পেটের ভেতরে চাপ সৃষ্টি করে, যা হার্নিয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।
করণীয়:
- প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হালকা হাঁটা
- ভারী খাবারের পরিবর্তে হালকা সুষম খাবার
- চিনিযুক্ত ও তেলে ভাজা খাবার কমান
- অতিরিক্ত খাবার একবারে না খেয়ে ভাগ করে খান
৭. অ্যাসিড রিফ্লাক্স বাড়ায় এমন খাবার এড়িয়ে চলুন
বিশেষ করে যারা Hiatal Hernia-এর ঝুঁকিতে আছেন, তাদের জন্য অ্যাসিড রিফ্লাক্সের খাবার ক্ষতিকর।
যা এড়িয়ে চলবেন:
- ঝাল, ভাজা ও মশলাযুক্ত খাবার
- টমেটো বা সাইট্রাস ফল
- গ্যাসযুক্ত পানীয় ও কফি
- খাওয়ার পরপরই শোয়া বা বেঁকে থাকা
৮. অল্প পরিমাণে বারবার খাবার খান
তিনবার ভারী খাবারের পরিবর্তে দিনে ৪ থেকে ৫ বার অল্প অল্প করে খাবেন। এতে হজম ভালো হবে এবং পেটে অতিরিক্ত চাপ পড়বে না।
হার্নিয়া প্রতিরোধে এমন জীবনযাপন গড়ে তুলুন যা পেশি ও টিস্যুকে শক্ত রাখে, কোষ্ঠকাঠিন্য কমায় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। নিয়মিত ব্যায়াম, সঠিক ভঙ্গি বজায় রাখা, পর্যাপ্ত পানি পান করা ও ভারী বস্তু না তোলার অভ্যাস গড়ে তুললে হার্নিয়ার ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব।





