সুস্থ জীবনের জন্য ৫ স্বাস্থ্যকর অভ্যাস

সুস্থ জীবনের জন্য ৫ স্বাস্থ্যকর অভ্যাস

সুস্থ জীবনের পথে স্থায়ী পরিবর্তনই আসল সমাধান, নয় ক্ষণস্থায়ী ফ্যাশন বা ট্রেন্ড।

আজকের সময়ে স্বাস্থ্য নিয়ে নানা তথ্য, পরামর্শ ও ট্রেন্ড আমাদের চারপাশে ভেসে বেড়ায়। কেউ বলেন একভাবে খেতে, কেউ বলেন অন্যভাবে চলতে। এই বিভ্রান্তির মাঝে হারিয়ে যায় সহজ সত্য যে ভালো স্বাস্থ্যের ভিত্তি গড়ে ওঠা নিয়মিত ও সচেতন জীবনযাপন। হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল সম্পর্কিত ম্যাস জেনারেল ব্রিগহামের চিকিৎসক ড. উইন আর্মান্ড দিয়েছেন এমন পাঁচটি সহজ অভ্যাসের পরামর্শ যা জীবনকে রাখবে প্রাণবন্ত ও সুস্থ।

. প্রতিদিনের জীবনে আনুন সচেতনতা

ধ্যান ও মাইন্ডফুলনেস শুধু মানসিক শান্তি নয়, ঘুম, মনোযোগ এবং রক্তচাপের ওপরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। প্রতিদিন কয়েক মিনিট প্রকৃতির দিকে মন দেওয়া, হাঁটার সময় পাখির ডাক বা গাছের পাতা লক্ষ্য করা, অথবা Calm বা Headspace এর মতো অ্যাপ ব্যবহার করা সবই সাহায্য করে মনকে বর্তমান মুহূর্তে ফিরিয়ে আনতে। বক্স ব্রিদিংয়ের মতো সহজ শ্বাসপ্রশ্বাসের অনুশীলন হৃদস্পন্দন ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং উদ্বেগ কমায়।

. ঘুমকে দিন সর্বোচ্চ গুরুত্ব

পর্যাপ্ত ঘুম না হলে, মন ও শরীরের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। Centers for Disease Control and Prevention বলছে, প্রাপ্তবয়স্কদের অন্তত ৭ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। তবে শুধু সময় নয়, ঘুমের মানও গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া ও ওঠা, বিকেলের পর ক্যাফেইন এড়িয়ে চলা, এবং ঘুমের আগে অন্তত আধা ঘণ্টা স্ক্রিন বন্ধ রাখা এসব অভ্যাস ঘুমের মান উন্নত করে। যদি নিয়মিত ক্লান্ত লাগে বা রাতে ঘুম ভেঙে যায়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন, কারণ এটি স্লিপ অ্যাপনিয়ার মতো সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে।

.  প্রাকৃতিক খাবারের গুরুত্ব

সবজি, ফল, ডাল, শস্য ও বাদামভিত্তিক খাদ্যাভ্যাস দীর্ঘায়ু ও সুস্থতার জন্য সবচেয়ে কার্যকর। গবেষণায় দেখা গেছে, প্ল্যান্ট বেসড ডায়েট হৃদরোগ, ক্যানসার ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায় এবং পরিবেশের জন্যও ভালো। প্রসেসড খাবারে থাকে অতিরিক্ত চিনি, লবণ, কৃত্রিম রঙ ও রাসায়নিক উপাদান যা মস্তিষ্কে অপ্রয়োজনীয় ক্ষুধা জাগায়। তাই যতটা সম্ভব ঘরে রান্না করা প্রাকৃতিক খাবার খাওয়ার অভ্যাস করুন।

. চলুন আরও বেশি, বসুন কম

একটানা বসে থাকা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। ছোট ছোট সময়ে নড়াচড়া করা, হাঁটা মিটিং করা বা দুপুরের পর ১০ মিনিট হাঁটা এসব ছোট পরিবর্তনই বড় পার্থক্য আনে। ড. আর্মান্ড বলেন, “দক্ষতার কথা না ভেবে ভাবুন কীভাবে শরীরকে আনন্দময় উপায়ে সক্রিয় রাখা যায়।” নিয়মিত চলাফেরা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে, মানসিক প্রশান্তি আনে এবং আয়ু বাড়ায়।

. দৈনন্দিন জীবনে কমান বিষাক্ত উপাদানের সংস্পর্শ

আধুনিক জীবনে বাতাসের দূষণ, মাইক্রোপ্লাস্টিক ও রাসায়নিক পদার্থ যেমন PFAS থেকে পুরোপুরি দূরে থাকা কঠিন। কিন্তু সচেতনতা অনেক ক্ষতি কমাতে পারে। পরিশোধিত পানি ব্যবহার করুন, প্লাস্টিকের পাত্রের বদলে কাচ বা স্টেইনলেস স্টিল ব্যবহার করুন, এবং রান্নার সময় জানালা খুলে রাখুন। যদি সম্ভব হয়, দূষণ বা ধোঁয়ার সময় ঘরে এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করুন। এতে হৃদযন্ত্র ও ফুসফুস দুইই সুরক্ষিত থাকে।

সত্যিকারের সুস্থতা আসে না তাত্ক্ষণিক সমাধান বা নতুন ট্রেন্ড থেকে, বরং আসে নিয়মিত অভ্যাস ও সচেতনতার মাধ্যমে। প্রাকৃতিক খাবার খান, যথেষ্ট ঘুমান, প্রতিদিন চলাফেরা করুন, গভীরভাবে শ্বাস নিন এবং আপনার পরিবেশকে রাখুন পরিশুদ্ধ। এই পাঁচটি অভ্যাসই হতে পারে আজীবন সুস্থ ও প্রাণবন্ত জীবনের মূল চাবিকাঠি।

    Scroll to Top