টাইপ ২ ডায়াবেটিস বা চিনি রোগ এমন একটি দীর্ঘমেয়াদি রোগ যা বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেকের মধ্যে দেখা দেয়। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এই রোগটি অনেকাংশেই প্রতিরোধযোগ্য।
বিশ্বস্ত স্বাস্থ্যসংস্থা যেমন Mayo Clinic এবং CDC জানিয়েছে যে নিয়মিত ব্যায়াম, সুষম খাদ্যাভ্যাস, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ ও নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে পারে। প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে এই জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে অনেক ক্ষেত্রেই রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
১. ওজন নিয়ন্ত্রণ
- মোট শরীরের ওজনের মাত্র ৫ থেকে ৭ শতাংশ কমালেও ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়।
- কোমরের চারপাশে অতিরিক্ত চর্বি কমানো ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ায় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
২. নিয়মিত শারীরিক অনুশীলন
- প্রতি সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট মাঝারি মাত্রার ব্যায়াম যেমন দ্রুত হাঁটা, সাঁতার কাটা বা সাইক্লিং ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ায়।
- সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন পেশি শক্ত করার ব্যায়াম করলে বিপাকক্রিয়া উন্নত হয় ও ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
৩. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
- প্রতিদিনের খাবারে শাকসবজি, ডাল, ফলমূল, পূর্ণ শস্য ও প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার রাখুন।
- পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট, মিষ্টি খাবার ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্য যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন।
- জলপাই তেল, বাদাম, মাছ ও অ্যাভোকাডো থেকে প্রাপ্ত ভালো ফ্যাট গ্রহণ রক্তে চিনি ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
- খাবারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করুন এবং নির্দিষ্ট সময় পরপর খাবার গ্রহণের অভ্যাস গড়ে তুলুন।
৪. মানসিক চাপ ও ঘুমের যত্ন
- দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ ও ঘুমের অভাব ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বাড়িয়ে রক্তে চিনি বাড়ায়।
- প্রতিদিন কিছু সময় ধ্যান, যোগব্যায়াম, শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম বা হালকা হাঁটার মতো বিশ্রামমূলক অভ্যাস রাখলে মানসিক ভারসাম্য বজায় থাকে।
৫. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা
- নিয়মিত রক্তে শর্করার পরীক্ষা ডায়াবেটিসের প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করতে সাহায্য করে।
- রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, চোখ ও কিডনির অবস্থা নিয়মিত পরীক্ষা করলে জটিলতা প্রতিরোধ করা যায়।
৬. দৈনন্দিন স্বাস্থ্যকর অভ্যাস
- ধূমপান পরিহার করুন এবং অ্যালকোহল সীমিত করুন।
- পর্যাপ্ত পানি পান করুন ও নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমান।
- পরিবার, বন্ধুবান্ধব বা কমিউনিটি সাপোর্ট গ্রুপে যুক্ত থাকুন এতে অনুপ্রেরণা বজায় থাকে।
টাইপ ২ ডায়াবেটিস সবসময় পুরোপুরি নিরাময়যোগ্য না হলেও এটি নিয়ন্ত্রণ করা, প্রতিরোধ করা এবং অনেক ক্ষেত্রেই উল্টে দেওয়া সম্ভব যদি আমরা নিয়মিত জীবনধারা পরিবর্তনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হই।
CDC অনুযায়ী শুধুমাত্র স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও শারীরিক অনুশীলনের মাধ্যমে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি প্রায় ৫৮ শতাংশ পর্যন্ত কমানো যায় এবং ৬০ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সীদের ক্ষেত্রে এটি ৭১ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে।
অর্থাৎ প্রতিদিনের ছোট ছোট সচেতন সিদ্ধান্তই হতে পারে এক সুস্থ, সক্রিয় ও ডায়াবেটিসমুক্ত জীবনের চাবিকাঠি।





